লিনডাক ট্যাবলেট কিসের ঔষধ খাওয়ার নিয়মসহ বিস্তারিত জেনে নিন। সুলিন্ডাক ১০০ ও ২০০ মিলিগ্রাম এর এই ট্যাবলেট কেন খায়, কিভাবে কাজ করে কতদিন খেতে হয় ইত্যাদি জানতে পারবেন।
লিনডাক ট্যাবলেট কিভাবে কাজ করে
সুলিনডাক একটি নন-স্টেরয়ডাল এন্টিরিউম্যাটিক এজেন্ট যার এন্টি-ইনফ্লামেটরি, অ্যানালজেসিক এবং এন্টি-পাইরেটিক বৈশিষ্ট্য আছে। প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন সিন্থেটেজ ইনহিবিশন সম্ভবত নন-স্টেরয়ডাল এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্টগুলোর মূল কাজ। শোষণের পরে, সুলিনডাকের দুটি উল্লেখযোগ্য বায়োট্রান্সফর্মেশন হয়। এটি অক্সিডাইজ হয়ে সালফোন এবং তারপরে রিভার্সিভলি হ্রাস পেয়ে সালফাইডে পরিনত হয়। সালফাইড মেটাবলাইট টি জৈবিকভাবে সক্রিয় যা প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন সিন্থেসিস বন্ধ করে।
লিনডাক ট্যাবলেট এর কাজ কি
সুলিনডাক রিউম্যাটয়েড আর্থাইটিস, অস্টিওআর্থাইটিস, অ্যাস্কাইলোজিং স্পনডিলাইটিস, পেরিআরটিকুলার প্রদাহজনিত রোগ, কাঁধে তীব্র ব্যথা (তীব্র সাব এক্রোমিয়াল বার্সাইটিস/সুপ্রাম্পিন্যাটাস টেন্ডিনাইটিস), তীব্র গাউটি আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি এর লক্ষণগত চিকিৎসায় নির্দেশিত।
লিনডাক ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
সাধারণত দিনে দুইবার ১০০ মি.গ্রা. থেকে ২০০ মি.গ্রা. যদিও ঔষধের মাত্রা প্রতিটি পৃথক পৃথক রোগীর জন্য আলাদা হওয়া উচিত। সর্বাধিক দৈনিক ঔষধের মাত্রা ৪০০ মি.গ্রা.। সাধারনত তীব্র গাউটি আর্থ্রাইটিসে সাত দিন এবং কাঁধে তীব্র ব্যথায় সাত থেকে চৌদ্দ দিনই যথেষ্ট। সন্তোষজনক প্রতিক্রিয়ার পর ঔষধের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী ঔষধের মাত্রা হ্রাস করা যেতে পারে । সাধারণত ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিতে ঔষধের মাত্রা দিনে ২০০ মি.গ্রা. এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে দিনে দুবার ১০০ মি.গ্রা.। সুলিনডাক খাবারের সাথে নেওয়া উচিত।
লিনডাক ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
পরিপাকতন্ত্রীয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব ও কোষ্ঠকাঠিন্য। পরিপাকতন্ত্রে আলসার ও রক্তক্ষরণও হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলোর মধ্যে বেশীরভাগ দেখা যায় মাথা ঘোরা, ঘুমঘুম ভাব, মাথা ব্যথা এবং দুর্বলতা। অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হতাশা, টিনিটাস, বিভ্রান্তি, মাথাঅন্যভাব, অনিদ্রা, মানসিক ব্যঘাত, সিনকোপ, খিঁচুনি, কোমা, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, চোখে ঝাপসা দেখা এবং অন্যান্য প্রভাব, শোথ এবং ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, প্রস্রাবে রক্ত, ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি, ছলি, স্টোমাটাইটিস, চুল পড়ে যাওয়া এবং অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া।
হাইপারসেনসিটিভিটি সিনড্রোম গুলোর মধ্যে জ্বর এবং ঠান্ডা, ত্বকে ফুসকুড়ি বা অন্যান্য কিউটেনাস ম্যানিফেস্টেশন, হেপাটোটক্সিসিটি, লিউকোপেনিয়া, থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া, ইসিনোফিলিয়া, গ্রন্থিতে বা লিফ নোডে প্রদাহ এবং আর্থালজিয়া দেখা দেয়। লিউকোপেনিয়া, পারপুরা, থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া, এপ্লাস্টিক এনিমিয়া, হেমোলাইটিক এনিমিয়া, এপিট্যাক্সিস, অ্যাগ্রোনুলোসাইটোসিস, হাইপারগ্লাইসেমিয়া, হাইপারক্যালামিয়া এবং যোনিতে রক্তক্ষরণ দেখা দেয়। হেপাটাইটিস এবং জন্ডিসেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
লিনডাক ট্যাবলেট সেবনে প্রতিনির্দেশনা
যাদের সুলিনডাকে অ্যালার্জি হয় এবং এস্পিরিন অথবা অন্য কোন নন-স্টেরয়ডাল এন্টি-ইনফ্লামেটরি ঔষধের দ্বারা অ্যাজমাটিক অ্যাটাক্ট, ছলি ও রাইনাইটিস হয়। যাদের পাকস্থলীতে রক্ত ক্ষরণ ও আলসারের ইতিহাস আছে তাদের ক্ষেত্রে সুলিনডাক প্রতিনির্দেশিত। এটা শিশু, প্রসূতি ও স্তন্যদানকারীদের খাওয়া উচিত না।
অন্য ঔষধের সাথে লিনডাক এর মিথস্ক্রিয়া
সুলিনডাক ও এর সালফাইড মেটাবলাইট উচ্চমাত্রায় প্রোটিন বাউন্ড। রোগীকে ততক্ষণ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে যে এন্টিকোয়াগুলেন্টের অথবা হাইপোগ্লাইসেমিকের ঔষধের মাত্রার কোন পরিবর্তন হয়। এস্পিরিন সুলিনডাকের সক্রিয় সালফাইড মেটাবলাইটের বায়োএভেইলাবিলিটি হ্রাস করে।
এই সমন্বয়টি পরিপাকতন্ত্রীয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়, উপসর্গ নিরাময়ের বাড়তি ঔষধ ব্যতিত এই ঔষধগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। দীর্ঘদিন যাবত সুলিনডাকের সাথে প্যারাসিটামল খেলে কিডনির উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। এরকম সমন্বয় থেরাপি দেওয়ার সময় রোগীকে সূক্ষ্ম মেডিক্যাল পর্যবেক্ষনে রাখতে হবে। প্রোবেনেসিড সুলিনডাক ও এর সালফোন মেটাবলাইটের প্লাজমা ঘনত্ত্ব বাড়াতে পারে এবং সক্রিয় সালফাইড মেটাবলাইটের প্লাজমা ঘনত্ত্ব কিঞ্চিৎ হ্রাস করতে পারে।
সতর্কতা যেসব রোগী অন্যান্য নন-স্টেরয়ডাল এন্টিরিউম্যাটিক এজেন্ট যেমন এস্পিরিনের প্রতি অসহনীয় তারা সুলিনডাকের প্রতিও অসহনীয় হতে পারে। গর্ভাবস্থায়ঃ সুলিনডাক শুধুমাত্র ১ম ট্রাইমেস্টারে ব্যবহার করা যেতে পারে যদি মায়ের স্বাস্থ্য ভ্রুনের ঝুঁকি থেকে গুরুত্বপূর্ন হয়। দুগ্ধদানকালেঃ সুলিনডাক মাতৃদুগ্ধের দ্বারা নির্গত হয় কিনা সেটা জানা যায়নি । তাই ঔষধটি মায়ের জন্য কতটা জরুরী সেটা বিবেচনা করে এটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে “হয় মায়ের ঔষধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে নয়তো স্তন্যদান বন্ধ করতে হবে”। রক্তক্ষরণ, মৃগী, পার্কিন্সন অথবা মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে সুলিনডাক সাবধানতার সাথে প্রয়োগ করতে হবে। যকৃতের রোগীদের ক্ষেত্রেঃ যকৃতের রোগীদের ক্ষেত্রে সুলিনডাকের অর্ধায়ু দীর্ঘ হতে পারে এবং দৈনিক ঔষধের মাত্রা হ্রাস করা যেতে পারে।
লিনডাক এর মাত্রাধিক্য ব্যবহার
সুলিনডাকের মাত্রাধিক্যে সাধারনত পরিপাকতন্ত্র, মূত্রতন্ত্র ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে বিষক্রিয়ার উপসর্গ গুলো দেখা দেয়। এগুলোর চিকিৎসা মূলত সহায়ক চিকিৎসা এবং উপসর্গগুলো থেকে মুক্তি দেয় ।