মিথোট্রেক্স কিসের ঔষধ ও খাওয়ার নিয়ম

Alamgir

মিথোট্রেক্স-কিসের-ঔষধ

মিথোট্রেক্স কিসের ঔষধ, কিভাবে কাজ করে, খাওয়ার নিয়ম, গর্ভকালে খাওয়া যাবে কিনা, অতিরিক্ত খেলে কি করবেন, মিথোট্রেক্স কোন কোম্পানীর ঔষধ বিস্তারিত জানতে লেখাটি পড়ুন।

মিথোট্রেক্স কিভাবে কাজ করে

মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) হল একটি ফোলেট বিরোধী যা এন্টিনিউপ্লাস্টিক কেমোথেরাপিতে বিশেষ স্থান দখল করে লিউকেমিয়া উপশম, নিরেট টিউমার এবং জরায়ুর টিউমারের আরোগ্য প্রদান করে। অস্টিওজেনিক সারকোমা টিউমারে মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এর উচ্চ মাত্রায় প্রয়োগ উপকারী। মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) সোরিয়াসিস রোগের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এন্টিরিউম্যাটিক ঔষধ (ডিএমএআরডি) হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যা মাঝারী থেকে তীব্র রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর জন্য উপযোগী।

মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) ডিহাইড্রোফোলেট রিডাকটেইজ এনজাইমকে প্রতিরোধ করে, যা পিউরিন এবং পাইরিমিডিনের সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় এবং এর মাধ্যমে ডিএনএ এবং আরএনএ সংশ্লেষণ বাঁধাগ্রস্থ করে। এভাবে ফোলেট এন্টাগনিষ্ট সেলগুলোকে বাধাপ্রদান করে সেল চক্রের এস-ফেজ এর সময়। মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) ২৫/ মি.গ্রা./ মি` এর কম মাত্রায় আন্ত্রিক নালীতে সহজেই শোষিত হয়। প্লাজমা রস এবং ডোজ এর মধ্যে সরাসরি একটি সম্পর্ক বিদ্যমান।

মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) আনুমানিক ৩৫% প্লাজমা প্রোটিনে আবদ্ধ থাকে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে স্বল্পমাত্রার (২.৫-১৫ মাইক্রোগ্রাম/কেজি) ৪০-৫০% এবং উচ্চ মাত্রার (১৫০ মাইক্রোগ্রাম / কেজি) ৯০% অপরিবর্তিত অবস্থায় মূত্রের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয় এবং এর বেশিরভাগই প্রথম ৮ ঘন্টার মধ্যে হয়ে থাকে। এছাড়াও মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) খুবই অল্প পরিমাণে পিত্তনালী দ্বারা নিষ্কাশিত হয়।

মিথোট্রেক্স এর কাজ কি

মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) মাঝারি থেকে তীব্র রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ম্যালিগন্যান্ট রোগ এবং সোরিয়াসিস এ নির্দেশিত। এছাড়াও মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) শিশুদের পলিআর্টিকুলার কোর্স জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস এ নির্দেশিত হয়, বিশেষ করে যাদের ফার্স্ট লাইন থেরাপি যেমন এন.এস.এ.আই.ডি দ্বারা সম্পূর্ণ কোর্সেও পর্যাপ্ত ফলাফল পাওয়া যায় না। মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) মেইন্টেনেন্স থেরাপি হিসেবে শৈশবকালীন একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া তে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য ব্যবহার এর মধ্যে জরায়ু টিউমার, নন-হর্ডসকিল এবং বেশ কিছু সলিড টিউমারে ব্যবহৃত হয়।

মিথোট্রেক্স খাওয়ার নিয়ম

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস: সপ্তাহে একবার একক মাত্রায় ৭.৫ মি.গ্রা. নির্দেশিত অথবা ২.৫ মি.গ্রা. করে ৩টি বিভাজিত মাত্রায় ১২ ঘন্টা ব্যবধানে সেবন করতে হবে। সাপ্তাহিক সর্বোচ্চ মাত্রা ২০ মি.গ্রা.। জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস ১০ মি.গ্রা./মি২/সপ্তাহ মাত্রায় শুরু করতে হবে এবং অনিয়ন্ত্রীত রোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ মি.গ্রা./মি২/সপ্তাহ মাত্রা পর্যন্ত ব্যাবহার করা যাবে।

প্রয়োজনে ৬ সপ্তাহ পরে বিকল্প মাত্রায় সাপ্তাহিক ০.৩ মি.গ্রা. / কে.জি থেকে ০.৫ মি.গ্রা / কে.জি. এবং সর্বোচ্চ ১ মি.গ্রা./ কে.জি. পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
শিশুদের লিউকেমিয়া এর ক্ষেত্রে (মেইনটেনেন্স) : শারীরিক গঠনের উপর ভিত্তি করে সাপ্তাহিক ১৫ মি.গ্রা./ মি’ অন্যান্য ঔষধের সাথে মুখে খেতে হবে।

একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে: শারীরিক গঠনের উপর ভিত্তি করে সাপ্তাহিক একবার অথবা দুইবার ১৫-৩০মি.গ্রা./ মি’ অন্যান্য ঔষধের সাথে খেতে হবে।

কোরিওকারসিনোমা: প্রতিদিন ১৫-৩০ মি.গ্রা. করে মুখে খেতে হবে ৫ দিন এবং এইভাবে ৩ ৫ টি কোর্স সম্পন্ন করতে হবে এক থেকে – দুই সপ্তাহের বিরতিতে। ১০-১৬ মি.গ্রা./ মি’ মাত্রায় ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সাইক্লোফসমামাইড এবং ফ্লুরোইউরাসিল এর সাথে সমন্বয় করে ব্যবহৃত হয়।
সোরিয়াসিস: সাপ্তাহিক ১০-২৫ মি.গ্রা. মাত্রায় মুখে খেতে হবে।

মিথোট্রেক্স কখন খাওয়া যাবেনা

কিডনি জনিত সমস্যায় ইহা প্রতিনির্দেশিত, কারন ইহা প্রাথমিক ভাবে কিডনির মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। এছাড়াও তীব্র যকৃত জনিত সমস্যা, গর্ভাবস্থায় (গর্ভধারণের পরিকল্পনার তিন মাস পূর্বে মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে), স্তন্যদানকারী, তীব্র সংক্রমন এবং ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সী সীনড্রোম এ প্রতিনির্দেশিত।

অন্যান্য ঔষধের সাথে মিথোট্রেক্স এর প্রতিক্রিয়া

বেদনানাশক: মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এর নির্গমন এনএসএআইডি এর মাধ্যমে হ্রাস পায় (বিষক্রিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়), এসপিরিন এবং এজাপোপ্রাজন ব্যবহারের মাধ্যমেও নির্গমনের হ্রাস ঘটে (একই সাথে ব্যবহার এড়িয়ে যেতে হবে)।

এন্টিব্যাকটেরিয়া: মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এর নির্গমন সিপ্রোফ্লক্সাসিন এর মাধ্যমে হ্রাস পেতে পারে (বিষক্রিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়); মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এর এন্টিফোলেট ক্রিয়া বৃদ্ধি পায় সালফামিথোক্সাজল (কট্টিমোক্সাজল হিসেবে) এবং সালফোনাইড (ট্রাইমিথোপ্রাইম হিসেবে) এর সাথে ব্যবহারের ফলে; একই সাথে ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে; মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এর বিষক্রিয়া বৃদ্ধি পায় সালফোনামাইড, ডক্সিসাইক্লিন অথবা টেট্রাসাইক্লিন এর সাথে ব্যবহারের কারণে। মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এর নির্গমন হ্রাস পায় পেনিসিলিনের সাথে ব্যবহারের কারনে।

এন্টিইপিলেপটিকস: ফিনাইটয়িনের সাথে গ্রহণে মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এর এন্টিফোলেট প্রভাব বৃদ্ধি পায়; সাইটোটক্সিক ফিনাইটয়িনের শোষণ হ্রাস করে।
এন্টিম্যালেরিয়া: পাইরিমিথামাইনের মাধ্যমে এন্টিফোলেট প্রভাব বৃদ্ধি পায় ।
সাইক্লোসপরিন: বিষক্রিয়া বৃদ্ধি করে।
করটিকস্টারয়েড: হেমাটোলজিক্যাল বিষক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

রেটিনয়েডস: এসিট্রেটিন এর মাধ্যমে মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এর প্লাজমা ঘনীভূতকরণ বৃদ্ধি পায় (হেপাটোটক্সিসিটির ঝুঁকি বাড়ায়) একইসাথে ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। আলসার- হিলিং ড্রাগ: ওমিপ্রাজলের সাথে মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) গ্রহণে এর নির্গমন হ্রাস পায় (বিষক্রিয়া বৃদ্ধি পায়।

গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকালে মিথোট্রেক্স এর ব্যবহার

প্রেগনেন্সি ক্যাটাগরি ‘এক্স’। গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এড়িয়ে চলতে হবে। থেরাপী চলাকালীন ইহা জন্মগত বিকৃতি বা প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে কিন্তু এটি পরিবর্তনযোগ্য। একজন নারী বা পুরুষের মধ্যে এটি প্রয়োগের পর বন্ধ হওয়ার সময় থেকে পরবর্তী নূন্যতম তিন মাস গর্ভধারণ এড়িয়ে চলতে হবে। স্তন্যদান থেকে বিরত থাকতে হবে।

মিথোট্রেক্স এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এর সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমূহ অস্থিমজ্জা এবং গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টিনাল ইপিথেলিয়ামের উপর হয়ে থাকে। অস্থি মজ্জার হঠাৎ করে হ্রাস ঘটতে পারে এবং লিউকোপেনিয়া, থ্রোমবোসাইটোপেনিয়া এবং এনেমিয়া বা রক্তশূন্যতার ঘটনাও ঘটতে পারে। মেগালোব্লাস্টিক এনেমিয়াও হতে পারে। মুখের আলসার এবং গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টিনাল সমস্যা সমূহ হলো বিষক্রিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। স্টোমাটাইটিস অথবা ডায়রিয়া হলো এমন লক্ষণ যার জন্য চিকিৎসা করা না হলে আন্ত্রিক রক্তপ্রদাহ, আন্ত্রিক ছিদ্র এবং মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে।

মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এর কারণে যেসকল রোগীর মিউকোসাল অথবা গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টিনাল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে ফলিক এসিড ৫ মি.গ্রা. গ্রহণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সাহায্য করে। মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) এর চিকিৎসায় লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে, যা স্বল্পমেয়াদী (উচ্চ মাত্রায়) এবং দীর্ঘমেয়াদী (অনেকদিন যাবৎ ব্যবহারের কারণে) অথবা উভয় ক্ষেত্রেই হতে পারে।

হেপাটোটক্সিসিটি লক্ষণ ছাড়াও হেপাটিক ফাইব্রোসিস এবং সিরোসিস হতে পারে এবং ফলাফল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে কিডনির সমস্যা এবং টিউবিউলার নেক্রোসিস হতে পারে উচ্চ মাত্রায় ব্যবহারের জন্য, জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ ফুসফুসের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, অ্যালোপেসিয়া, অস্টিওপোরোসিস, আর্দ্রালজিয়া, মায়ালজিয়া, চোখের জ্বালাপোড়া এবং ডায়বেটিকস হতে পারে।

মিথোট্রেক্স ব্যাবহারে সতর্কতা ও পূর্ব সতর্কতা

মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) সতর্কতার সাথে যকৃত ও কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা এবং পরফাইরিয়াতে ব্যবহার করতে হবে। চিকিৎসা শুরুর পূর্বে রক্তের পরীক্ষা (শ্বেত রক্ত কণিকা এবং অনুচক্রিকা), কিডনী ও যকৃতের পরীক্ষা এবং থেরাপি স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত সাপ্তাহিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পরবর্তীতে প্রত্যেক ২-৩ মাস অন্তর রোগীকে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।

রক্তে সমস্যা, পেপটিক আলসার, আলসারেটিভ কোলাইটিস, ডায়ারিয়া, আলসারেটিভ স্টোমাটাইটিস (স্টোমাটাইটিস বাড়তে থাকলে পরিহার করতে হবে) এবং পরফাইরিয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এটি পরিহার করতে হবে যদি প্লুরাল ইফিউশন অথবা এসসাইট্স বিদ্যমান থাকে, কারণ এটির এই জাতীয় তরলে জমা থাকার প্রবনতা থাকে এবং পরবর্তীতে ইহা চক্রাকারে ফিরে আসে মায়েলোসাপ্রেশন এর সহযোগী হিসেবে।

মিথোট্রেক্স অতিমাত্রায় খেলে কি করবেন

মিথোট্রেক্স (মিথোট্রেক্সেট) অতিমাত্রায় সেবনের জন্য বিষক্রিয়া নিবারণে লিউকোভোরিন (ফলিক এসিড) নির্দেশিত।

মিথোট্রেক্স কোন কোম্পানীর ঔষধ

মিথোট্রেক্স হলো ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ঔষধ। এই ট্যাবলেট ২.৫, ১০, ১৫ মিলিগ্রামের হয়। বড় বড় ফার্ম্মেসী ব্যতিত হয়ত এটি পেতে অসুবিধা হতে পারে।

Leave a Comment