প্রিগাবালিন হলো প্রিগাবা, পিজি, নিওগাবা, গাবা, প্রিবালিন ইত্যাদি যত ক্যাপসুল আছে, এগুলোর গ্রুপের নাম। আসুন জেনে নিই প্রিগাবালিন কিসের ঔষধ ও খাওয়ার নিয়ম।
প্রিগাবালিন বিভিন্ন পরিমানের হয়ে থাকে, এর মধ্যে ২৫, ৫০, ৭৫ ও ১০০ মিলিগ্রাম বাংলাদেশে সচরাচর তৈরি ও বাজারজাত হয়। কয়েকটা কোম্পানি ১৫০ মিগ্রা ক্যাপসুলও করে থাকে।
প্রিগাবালিন কিভাবে কাজ করে
গামা এমাইনো বিউটারিক এসিডের একটি গাঠনিক জাতক। যা সরাসরী গাবা-এ ও গাবা-বি এবং বেনজোডায়াজিপামের সাথে যুক্ত হয়না। ইহা মস্তিষ্কে ভোল্টেজ গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেলের আলফা-২ ডেল্টা সাব-ইউনিটের সাথে প্রবল আসক্তিতে যুক্ত হয়। মুখে খাওয়ার পর প্রিগাবালিনের বায়োএবাইলাবিলিটি ৯০% বা তার বেশী। প্রিগাবা কিডনীর রেচন দ্বারা নির্গত হয়, এবং এর নিষ্ক্রান্তীয় হাফ লাইফ প্রায় ৬ ঘন্টা। প্রিগাবালিন এর শোষনের উপর খাবারের কোন ভুমিকা নেই।
প্রিগাবালিন এর কাজ কি
নিউরালজিয়া বা স্নায়ুর ব্যথা, ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিক ব্যথা, হার্পিস পরবর্তী নিউরালজিয়া, মৃগীরোগ, ক্রনিক বা দীর্ঘদিনের ব্যথা, রগে টেনে ধরে যেসব ব্যথা হয় তার প্রিগাবালিন খুব ভাল কাজ করে।
প্রিগাবালিন খাওয়ার নিয়ম
নিউরোপ্যাথিক ব্যথার জন্য – ৭৫ মিগ্রা করে দৈনিক ২ বার, তবে প্রথম সপ্তাহ মাত্রা একটু কম রাখা ভাল।
প্রয়োজনে কয়েক সপ্তাহ পর মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। প্রিগাবালিনের সর্বোচ্চ মাত্রা ১৫০ মিগ্রা করে দিনে ২ বার পর্যন্ত দেয়া যায়।
মৃগীরোগ, পোস্ট হার্পটিক নিউরালজিয়া রোগের জন্যও প্রায় একই ডোজ। তবে, ক্রণিক পেইনের ক্ষেত্রে শুরু করতে পারেন প্রিগাবালিন ২৫ মিগ্রা দিয়ে, দৈনিক বার করে খাওয়ানো যেতে পারে। আস্তে আস্তে মাত্রা বাড়াতে পারেন। অতিসংবেদনশীল রোগীর ক্ষেত্রে প্রিগাবালিন প্রতি নির্দেশিত।
প্রিগাবালিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি
প্রিগাবালিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তেমন নাই, তবে মাথা ঘুরানো, ঝিমুনি, তন্দ্রা, চোখে ঝাপসা দেখা ও মাঝে মাঝে কারও সাময়িক ডায়রিয়া হতে পারে। মাথা ঘুরালে তার জন্য সিনারন প্লাস দেয়া যেতে পারে। তবে অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য কোন ঔষধ ব্যবহারের প্রয়োজন নাই।
প্রিগাবালিন ব্যবহারে সতর্কতা
হঠাৎ করে pregabalin সেবন বন্ধ করলে হয়ত কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন- বমিবমি ভাব, অনিদ্রা, ডায়রিয়া ও মাথাব্যথা হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে মাত্রা কমিয়ে প্রিগাবালিন সেবন বন্ধ করা উচিৎ। আবার প্রিগাবালিন সেবন শুরুর ক্ষেত্রেও প্রথমদিকে ঝুকিপূর্ণ কাজ এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন- উচু স্থানে উঠে কাজ করা, ড্রাইভিং সহ এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রিগাবালিন দিয়ে চিকিৎসায় কখনো ক্রিয়েটিনিন কাইনেজ বেড়ে যেতে পারে, এতে মায়োপ্যাথি দেখা দিলে, অথবা ক্রিয়েটিনিন কাইনেজ বেড়ে গেলে, সেবন বন্ধ করে দিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রিগাবালিন খাওয়া যাবে কিনা
গর্ভাবস্থায় প্রিগাবালিন এর ক্যাটাগরী সি, ঝুকি ও উপকারীতা বিবেচনা সাপেক্ষে চিকিৎসক চাইলে দিতে পারেন। তবে গর্ভাবস্থায় প্রিগাবালিন সেবনে ভ্রুণের ঝুঁকি আছে।
স্তন্যদানে প্রিগাবালিন মাতৃদুগ্ধে নিঃসরণ হয়, শিশুদের ক্ষেত্রে প্রিগাবালিন এর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও কার্যকারীতা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক ব্যতিত প্রিগাবালিন সেবন করা উচিৎ নয়।
প্রিগাবালিন এর ড্রাগ ইন্টারেকশন
গাবাপেনটিন ও প্রিগাবালিন একত্রে সেবনে তাদের শোষনের পরিমান অপরিবর্তিত থাকে। প্রিগাবালিন অন্যান্য এন্টিএপিলেপটিক এজেন্ট বা মুখে খাওয়ার জন্ম নিরোধকের সাথে ইন্টারেক্ট করেনা।
প্রিগাবালিন গ্রুপের কয়েকটা ব্র্যান্ড জেনে নিন
প্রিগাবালিন গ্রুপের কয়েকটা ব্র্যান্ডের সাথে পরিচিত করাই- লিরিক ক্যাপসুল হলো হেল্থ কেয়ার ফার্মার, পিজি ক্যাপসুল হলো- এসকায়েফ এর, প্রিগাবা হলো- ওপসোনিন এর, গাবা হলো- রেনাটা লিমিটেড এর, প্রিবালিন হলো- ডেল্টা ফার্মার, এগুলো সবই ভাল মানের প্রিগাবালিন ক্যাপসুল। আরও কোন বিষয়ে জানতে চাইলে কমেন্টে বলবেন।
আরও পড়ুন – ইসোমিপ্রাজল কিসের ঔষধ খাওয়ার নিয়মসহ জেনে নিন